মূল পাতা আন্তর্জাতিক ধনী দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলোর গলা চেপে ধরেছে : জাতিসংঘ মহাসচিব
রহমত নিউজ ডেস্ক 05 March, 2023 04:25 PM
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস বলেছেন, আকাশছোঁয়া জ্বালানির দাম ও আগ্রাসী সুদের হারের মাধ্যমে ধনী দেশগুলো দরিদ্র ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর গলা চেপে ধরেছে। এছাড়া গরিবদের বিরুদ্ধে ধনী দেশগুলোর বিদ্বেষপূর্ণ নানা কৌশলের নিন্দাও জানিয়েছেন তিনি। আকাশছোঁয়া জ্বালানির দাম ও আগ্রাসী সুদের হারের মাধ্যমে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে রাখছে উন্নত দেশগুলো। একইসঙ্গে ধনী দেশগুলোকে ‘দুষ্ট চক্রে আটকে থাকা’ অন্যদের সাহায্য করার জন্য বার্ষিক ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করা উচিত।কারণ হিসেবে ধনীদের ‘দুষ্ট চক্রে আটকে থাকার’ ফলে দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার এবং স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাখাতে উন্নতি করার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
শনিবার (৪ মার্চ) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে, কাতারের দোহায় বিশ্বে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদমাধ্যম বলছে, নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ১০ বছরে পর পর ‘লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিজ’ (এলসিডি) বা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আর তাই এই সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে দু’বার বাতিল হয় এই সম্মেলন। অবশেষে শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় সেই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে বক্তৃতা দেন গুতেরেস। ৪৬টি দেশ এবারের এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়। আফগানিস্তান আর মিয়ানমারের সরকারকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো স্বীকৃতি দেয় না বলে ওই দুই দেশের কোনও প্রতিনিধি সম্মেলনে ছিলেন না। দোহায় যে ৪৬টি দরিদ্র ও অনুন্নত দেশ এই সম্মলনে যোগ দিয়েছিল, শনিবার তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। নাম উল্লেখ না করেই যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত পশ্চিমা দেশগুলোকে তীব্র ভাষায় সমালোচনার পাশাপাশি আক্রমণ করেন তিনি। যদিও দোহার এই সম্মেলনে কোনও উন্নত দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আপনারা (এলডিসি দেশগুলো) পৃথিবীতে প্রতি আটজনের একজনের প্রতিনিধিত্ব করেন। উন্নত জীবন ও উন্নয়নের জন্য আপনাদের অসাধারণ প্রচেষ্টার আমি প্রশংসা করি। কিন্তু আপনার দেশগুলোও এমন এক দুষ্টচক্রে আটকে আছে যা উন্নয়নকে কঠিন করে তোলে। আমরা আমাদের অন্যায্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক ব্যবস্থার সৃষ্ট বৈষম্য সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন। স্বল্পোন্নত দেশগুলো যখন প্রয়োজনীয় সম্পদের জন্য ক্ষুধার্ত থাকে, ঋণে ডুবে থাকে এবং অসম করোনা মহামারি মোকাবিলায় ঐতিহাসিক অবিচারের সঙ্গে লড়াই করছে, তখন এসব দেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন চ্যালেঞ্জিং। জলবায়ু বিপর্যয় সৃষ্টির পেছনে আপনাদের কোনও দায় না থাকলেও এই বিপর্যয় মোকাবিলা করা আপনাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যখন মূলধনের দাম আকাশচুম্বী এবং প্রাপ্ত আর্থিক সহায়তা তলানিতে নেমে যায়। এছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি জায়ান্টরা প্রচুর মুনাফা করলেও আপনাদের দেশে লাখ লাখ মানুষ তাদের টেবিলে খাবার রাখতে পারেন না। আর তাই প্রতি বছর এই অনুন্নত দেশগুলোর মানুষের স্বার্থে উন্নত দেশগুলোর কমপক্ষে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ধনী দেশগুলোর তৈরি করা। তারা নিজেদের সুবিধার জন্যই এই ব্যবস্থা চালু রেখেছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়া দরিদ্র দেশগুলোকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েও ধনী দেশগুলো মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।